কলম থেকে শুরু হোক জীবনের পরিচয়...

 





"পানির ফোঁটা যখন নদীতে গিয়ে পড়ে, তখন তার কোনো আলাদা পরিচয় ফুটে ওঠে না, কিন্তু যখন তা গোলাপ পাঁপড়ির উপর পড়ে তখন তা মুক্তার মত দীপ্তিময় হয়ে ওঠে।" অর্থাৎ উত্তম জায়গাটি খুঁজে বের করে নিজেকে দীপ্তিময় করে তুলতে সক্ষম হবার মাকেই রয়েছে জীবনের পরম সার্থকতা।


যদি জীবনের উদ্দেশ্য থাকে, তবে উদ্দেশ্যেকে বাস্তবে রূপদানের আবেগও থাকবে। জীবনের কাঙ্ক্ষিত গন্ধবে পৌছার একমাত্র উপায় হলো। নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠা। এজন্য যে-আপনি কোথায় ছিলেন, কোথায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে বিষয়টি হলো আপনি কোথায় যেতে চান। বেশিরভাগ মানুষ অসফল বা অকৃতকার্য হয় মেধার স্বল্পতা বা বুদ্ধিহীনতার জন্য নয় বরং উদ্দীপনা, আকাঙ্ক্ষা, নির্দেশনা ও শৃঙ্খলার অভাবে। আমাদের ভেতরের যে জিনিসটি একজন মানুষকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে তা হলো দৃঢ় মনোবল বা মানসিকতা। আগে একটি লক্ষ্য স্থির করুন, তারপর তা আবেগ ও অধ্যবসায় দিয়ে লক্ষ্যের প্রতি স্থির থেকে অগ্রসর হোন। বলা বস্তুল্য-আবেগের প্রকৃতি বহুরূপি: সুতরাং সেই আবেগই ধারণ করুন যা আপনার স্বপ্ন পূরণে রাতের ঘুম তাড়িয়ে বেড়ায়। জীবনকে অর্থময় করার জন্য একটি উদ্দেশ্যের অনুসন্ধান করতে হয় এবং সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চেষ্টা করতে হয়। বাস্তব জীবন একটি প্রতিযোগিতা, এতে অংশগ্রহণ করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগীরা বেড়ে ওঠে। মনে রাখুন-বিজয়ীরা ভিন্ন কোনো কাজ করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে সফল হন।


প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ জেগে থাকুক আর ঘুমিয়ে থাকুক ঝুঁকি তার নিভাসঙ্গী। একজন ব্যক্তি ঝুঁকিকে যতই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন না কেন ঝুঁকি তার সাথে ততই আঠার মতো লেগে থাকে। কাজেই ঝুঁকিকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। লক্ষ করুন যে জাহাজ মহাসমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে তার ঝড়ের মধ্যে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু ঝড়ের ভয়ে যে জাহাজ বন্দরে পড়ে থাকে সে জাহাজও ধীরে ধীরে মরচে ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আসলে একজন প্রকৃত বীর ঝুঁকিকে এড়িয়ে চলে না, বরং ঝুঁকিতে হাসিমুখে বরণ করে তা জয় করে। শিক্ষা জীবনে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা একজন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অনুপ্রেরণায় শুধু জোগায় না বরং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়ে থাকে।


ছাত্র জীবনে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাৎপর্য সর্বাগ্রে। কারণ সিদ্ধান্তহীনতার জন্য অনেক সুযোগ ও সস্থারনা নাই হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত হয়। আমাদের এ কথা মনে রাখা উচিত-যারা অপেক্ষা করে তারা হয়ত কিছু পায়, কিন্তু তারা সেইটুকুই পায় যা পরিশ্রমীদের পুরস্কার দেওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে। বড় হওয়ার স্বপ্ন, মানব কল্যাণে ব্রত, নিরলস চেষ্টা ও লেগে থাকার মানসিকতা একজন মানুষকে সাফল্যের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছে দিতে পারে।


একজন শিক্ষক হলেন একজন পরিচালক। আর একজন দক্ষ পরিচালক হচ্ছেন তিনি, যিনি সাধারণ মানের শিক্ষার্থী দিয়ে অসাধারণ কাজ করান এবং তাদের কাজ করতে উদ্যোমী করেন। নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলাই সত্যিকারের শিক্ষকতার বৈশিষ্ট্য। একজন দক্ষ শিক্ষক একাধারে একজন পরিচালক, প্রশিক্ষক, উৎসাহদাতা ও পথপ্রদর্শক


পৃথিবী শিক্ষিত অথচ অসফল মানুষে ভর্তি। অধ্যবসায়ী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ- মানুষেরাই প্রকৃত শক্তিমান। যে কাজ শুরু হয়েছে তা শেষ করার অঙ্গীকার ও দৃঢ় মনোবলের নামই অধ্যবসায়। নিজের স্বপ্নযাত্রা অনেক সময় পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে হয়ত মাঝপথে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে হবে কিন্তু বিজয়ীরা কষ্ট সহ্য করে এগিয়ে চলে। যারা কোন বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হন নি, তাদের থেকে যারা প্রতিকূলতা অরিক্রম করে এসেছেন, তাদের ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। মনে রাখুন-অলস ইচ্ছে কখনও পূরণ হয় না, কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস যে আকাঙ্ক্ষা বারণ করে রা যতব হয়। উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাব দৃশ্যমান হলে কাজে সফলতা আসবে না। এ কথা সত্য যে, অসফলতা জীবনের-ই একটি অংশ কিন্তু কখনই ভুলে যাবেন না-আপনার পিতামাতা বারবার ব্যর্থ হওয়ার জন্য অল্পেনাকে কলু সেননি।


আকস্মিক বা দৈব কোনো ঘটনার নাম সফলতা নয়। এর জন্য প্রস্তুতি ও মনোভাব প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের জয়ী হওয়ার ইচ্ছে থাকে, কিন্তু খুব কম লোকের-ই জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রচেষ্টা আছে। প্রস্তুতি ধীরে ধীরে একজন মানুষকে ভেতর থেকে আত্মগ্রতায়ী করে তোলে। প্রস্তুতি মানে পরিকল্পনা ও অনুশীলন। আমাদের মনে রাখতে হবে-প্রস্তুতি অর্থ ব্যর্থতাকে সহ্য করা কিন্তু মেনে নেওয়া নয়। একজন যথার্থ মানুষ বিশ্বাস করে গভীর মনোযোগ আর পরিকল্পিত নিরলস পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেই বড় নির্বোধ, যে স্বপ্ন দেখে কিন্তু সে অনুসারে কাজ করে না।


মানুষের জীবনে সুযোগ হলো চলন্ত বাসের মত। একটা হাতছাড়া হয়ে গেলে একটু অপেক্ষা করলে আরেকটা হাজির হয়ে যায়। কাজেই ধৈর্য্য থাকতে হবে। ধৈর্য্য মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়, শেষ সময়বিন্দু পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সাহস যোগায়। যারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় তাদের সফল হবার সম্ভাবনা জীবন্তই থাকে, কিন্তু যারা চেষ্টা করা ছেড়ে দেয় তাদের ব্যর্থ হওয়াটা শতভাগ সুনিশ্চিত হয়ে যায়। মনে রাখুন-স্বপ্নহীন জীবন প্রাণহীন লাশের মত।


একজন শিক্ষার্থীর জীবনে চূড়ান্ত সফলতা আসে বিনম্রতা থেকে। কেননা বিনম্রতা শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে, মেধাকে শাণিত করে, চিন্তার প্রসারণ ঘটিয়ে দূরদর্শীতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মত্ম উপলব্ধিবোধকে বিকশিত করে। ক্রোধ, লোভ, হিংসা অহংকার মুক্ত অবস্থার নামই হলো বিনম্রতা। সর্বদাই সময়কে গুরুত্ব দিতে হয়। নিজেকে উন্নত করার জন্য সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করা উচিত; যাতে অপরের সমালোচনা করার। মতো সময় অবশিষ্ট না থাকে। উন্নত মানসিকতার কাছে কোনো উদ্বেগ, উৎকর্তা, দুশ্চিন্তা, সন্দেহ, অনিশ্চিয়তা সুবিধা করতে পারেনা।


যে শিক্ষার্থী বন্ধুরা...


যেকোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন হলো বাস্তব জীবনে পদার্পণের পূর্ব প্রস্তুতির কাল। কাজেই সেখানে বিরহ থাকবে। বরুন, আপনার কথায়। বলি-আপনি আপনার প্রিয় বিদ্যাপীঠে এস.এস.সি/এইস.এস.সি পরীক্ষার্থী কিংবা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আসন্ন পাবলিক পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটলেই আপনি শিক্ষাজীবনের নতুন পর্বে অবতীর্ণ হবেন। এ ক্ষেত্রে সেই বুদ্ধিমান, যে ভবিষ্যতের কথা মাথায় নিয়ে বর্তমান ধাপকে উন্নত করতে নিজের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি একজন শিক্ষার্থীকে দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পেতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। আমরা সবাই জানি- সময় গেলে সাধন হয় না।


শিক্ষা জীবনের সংক্ষিপ্ত অথচ দীর্ঘপথে সেই শেষ পর্যন্ত সফল হয় যার থাকে সঠিক নির্দেশনা, নিরলস সাধনা আর অটুট আত্মবিশ্বাস। এই সময় একটা ভুল সিদ্ধান্তই আপনার স্বপ্নকে বিচ্যুত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যা দেতে ভালো নয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। কাজেই আপনার চারপাশে সহজলভ্য মুখরোচক বুলি যেন আপনাকে কাবু করতে না পারে, সর্তক থাকবেন। মেধা মননশীলতা ও যোগ্যতায় আপনি কোনো অংশেই নিম্নমুখী নন। কাজেই, নিজেকে কখনোই দুর্বল মনে করবেন না। নিজেকে দুর্বল ভাবার অর্থই হলো অন্যকে দামি করে তোলা। আপনার স্বপ্নের স্বাপ্নিক পূর্ণতায় ন্যূনতম অবদান রাখতে পারলে তা হবে এই নিরলস প্রচেষ্টার সার্থকতা।


আমাদের ভাবার কী ছিল, আর ভাবছি কী।


গাছের ডালে বসে থাকা পাখি কখনও ডাল ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে না। কারণ তার আত্মবিশ্বাস থাকে পায়ে, ডালে নয়। জাতির প্রয়োজনেই আপনার জন্ম হয়েছে। আপনি তখনই সফল হবেন "যখন সবাই বিশ্বাস করবে আপনি পারবেন না, আর কেবল আপনি বিশ্বাস করেন সম্ভব"। তাই তখনই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। এই জাতির তারুণ্যই আপনি। আর আপনি যদি হাল ছেড়ে দেন, তা হলে প্রিয় জন্মভূমি আগত ভবিষ্যতে কাকে নিয়ে তার স্বপ্নের বীজ বুনবে- একটু ভেবে দেখবেন কী???


Comments